হ্যাকিং কি? কেন হ্যাকার'রা সাইবার আক্রমন চালায়?
হ্যাকিং শব্দটার সাথে আমার প্রায় সকলেই কোনা না কোনো ভাবে পরিচিত। ইন্টারনেটে আবিষ্কার ১৯৬০ সালে হলেও ইন্টারনেটে থাকা তথ্যও যে চুরি করা যায় তা আমারা জানতে পারি ১৯৮০ সাল থেকে।
হ্যাকিং কি?
হ্যাকিং কয়েকটি ক্রিয়াকলাপ বোঝায় যেখানে, কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং এমনকি পুরো ইন্টারনেট জগৎতের সাথে কানেক্টেড সকল ডিজিটাল ডিভাইসগুলিতে নির্দিষ্ট ইউজারের/কর্তপক্ষের অনুমিত ছাড়া অন্য আরেকজনের ডিভাইসগুলোতে অ্যাক্সেস নেওয়ার চেষ্টা করা করা।
হ্যাকিং শব্দটিতে সর্বদা দূষিত উদ্দেশ্যে নাও থাকতে পারে তবে, আজকাল বেশিরভাগ হ্যাকিং এবং হ্যাকার সম্পর্কিত যেকোনে ব্যাপার সাইবার অপরাধ দ্বারা বেআইনী ক্রিয়াকলাপ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
হ্যাকার/হ্যাকিংয়ের ইতিহাস
১৯৮০ সালে ‘সাইকোলজি টুডে’ নামের এক ম্যাগাজিনে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে যাতে সর্বপ্রথম “হ্যাকার”
শব্দটি ব্যাবহার করা হয়। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হওয়া নিবন্ধটির শিরোনাম ছিল ‘হ্যাকার’স পেজ' যেখানে মাত্রাতিরিক্ত কম্পিউটারে আশক্তিকে হ্যাকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।
তারপর ১৯৮২ সালে আমেরিকান সায়েন্স ফিকশন ফিল্ম ‘ট্রনের' নায়ক কোনো একটি কোম্পানির কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যটিকে হ্যাকিং হিসাবে বর্ণনা করে।
পরের বছর মুক্তি পায় ওয়ারগেমস নামের আরেকটি চলচিত্র। ছবিটির প্লট ছিল একজন কিশোর উত্তর আমেরিকান অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ডের সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করাকে কেন্দ্র করে।ছবিটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক হলেও হ্যাকারদের সার্বিক কর্মকান্ড কিরূপ হতে পারে তা সম্পর্কে এবং হ্যাকার'রা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কি পরিমান হুমকি হতে পারে তার চিত্রটি ফুটে উঠে।
ওয়ারগেমস সিনেমা রিলিজ হওয়ার কয়েকাস পরে একদল কিশোর গ্যাং(হ্যাকার) যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কয়েকটি সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে, যা ছিল পৃথিবীর সর্বপ্রথম সাইবার আক্রম।
আরো পড়ুন কিভারে কাজ করে গুগল ট্রান্সলেটর?
কিশোর হ্যাকার দল যুক্তরাষ্ট্রের লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি, স্লোয়ান -কেটারিং ক্যান্সার সেন্টার, প্যাসিফিক ব্যাংক সহ কানাডার কয়েকটি সরকারী সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে।
তারপর যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস বিভিন্ন আইন পরিবর্তন, সংযোজন করে সাইবার আক্রমনকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে।
হ্যাকারদের প্রকারভেদ
অ্যান্টিভারাস সফ্টওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যারওয়ারবাইটস এর তথ্য মতে সকল হ্যাকারদের কার্যপ্রণালী মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়
- মোটা অংকের অর্থ হাতিয়া নেওয়া জন্য ব্যাংকের সার্ভারে প্রবেশ করে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের ক্রেডিট নাম্বার চুরি করা।
- কিছু হ্যাকার আছে যারা নিজেদের নাম প্রচার করার জন্য বিনা কারণে বিভিন্ন দেশের ওয়েবসাইট হ্যাক করে হ্যাকার দলের পরিচিত ওয়েবসাইটের হোম পেইজে ঝুলিয়ে দেওয়া।
- তারপরে রয়েছে কর্পোরেট গুপ্তচরবৃত্তি। যেখানে কোনো এক প্রতিস্ঠানের হ্যাকার’রা বাজের সুবিধা অর্জনের জন্য অন্য প্রতিস্ঠান পণ্য ও পণ্যপরিশেবা সম্পর্কিত সকল তথ্য চুরি করে।
সর্বশেষ তালিকায় রয়েছে এক রাষ্ট্র উপর অন্য রাষ্ট্রের সাইবার আক্রমন।
যেখানে কোনে একটি রাষ্ট্রের পৃস্ঠপোষকতায় চলে অন্য রাষ্ট্রের উপর সাইবার আর্কমন। কারণ, অন্য রাষ্ট্ররে বুদ্ধিবৃত্তি চুরি করা(কয়েকদিন আগে রাশিয়া বিরূদ্ধে ইংল্যান্ড,কানাডা ও আমেরিকা করোনা ভাইরাসে ভ্যাসসিনের তথ্য চুরির অভিযোগ করে), বিরোধী রাষ্ট্রের অবকাঠামোকে অস্থিতিশীল করার মত আরো কিছু কারণ।
ম্যারওয়ারবাইটস উক্ত চারটি হ্যাকারা শ্রেণী ছাড়াও আরো এক প্রকার হ্যাকারদের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়।
এমন একদল বা একজন হ্যাকার যারা/যিনি কোনো কারণে রাজনৈতিক বা সামাজিকভাবে অনুপ্রাণিত। এ জাতীয় হ্যাকার মূলত ক্যাক্টিভিস্ট/রাজনীতিবিদ কিংবা জগৎখ্যাত ব্যাক্তির বিভিন্ন গুরুকপূর্ণ নথি ফাঁস করে। সেটা হতে পারে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত কিংবা ব্যাক্তিগত আক্রোশ। উদাহরণ হিসেবে থাকছে উইকিলিক্স এবং লুলসেক।
বর্তমানে ভূরাজনাতীর কারণে এক দেশরে উপর বাড়ছে অন্য দেশের হ্যাকিং তেমনি যে কোনো ওয়েব বেসড সার্ভারকে হ্যাকারদের হাত থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বাড়ছে ‘এথিকাল হ্যাকিং’
এথিকাল হ্যাকিং কি?
নামটা দেখেই অনেকটা ধারণা পাওয়া যায় এথিকাল হ্যাকিং সম্পর্কে।
এথিকাল বা নৈতিক হ্যাকিং বা হ্যাকার এমন একজন/একদল হ্যাকার যিনি/যারা বিভিন্ন হ্যাকিং ট্যুলস ব্যাবহার করে ওয়েব বেসড যে কোনে সার্ভারের ত্রুটি গুলো খুঁজে বের করে। সাধারণ হ্যাকার'রা কোনে সার্ভারের যে দুর্বলতা গুলো ব্যাবহার করে অনৈতিকভাবে অন্যর সার্ভারে অ্যাক্সেস নেওয়ার চেষ্টা করে, এথিকাল হ্যাকারদের কাজ হলো সার্ভারে থাকে ঐ সকল দুর্বলতা খুঁজে বের করা এবং দুর্বলতাগুলোকে যথেষ্ঠ নিরাপদ করা যাতে অনৈতিকভাবে কোনো হ্যাকার সার্ভারে অ্যাক্সেস করতে না পারে।
অর্থাৎ কোনো প্রতিস্ঠান/রাষ্ট্র তাদের গুরুকপূর্ণ তথ্য হ্যাকার'রা যাতে চুরি করতে না পরে তার জন্য এথিকাল হ্যাকারদের সরনাপন্ন হয়।
২০২০ সালের হ্যাকিং এ শীর্ষ ৭ টি দেশ।
২০২০ সালে আন্তর্জাতিকভাবে ঘটে যাওয়া সকল হ্যাকিংয়ের মধ্য থেকে ৪১ ভাগ হ্যাকিং করেছে চীন।তাই ২০২০ সালে হ্যাকারদের শীর্ষ দেশ হিসেবে ১ নাম্বারে রয়েছে চীনের নাম।
তালিকার অন্য দেশ গুলো যথাক্রমে
যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক,রাশিয়া,তাইওয়ান,ব্রাজিল এবং রোমানিয়া।